টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা? - ontechbd.com

Latest

Alive for Technology

Thursday, December 2, 2021

টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা?

টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা ?

টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা?


টাইম ট্রাভেল নামটি শুনলেই চোখের সামনে একটি কাল্পনিক জগতের গোল টাইম মেশিন ভেসে ওঠে। যেখানে প্রবেশ করলেই মানুষ চলে যায় ভবিষ্যতে। দেখতে পায় অত্যাধুনিক দালানকোঠা, দ্রুতগতির যানবাহন যা কল্পনাকেও হার মানায়। আমাদের সকলেরই ইচ্ছে হয় যেন ভবিষ্যত থেকে কিছুক্ষণ ঘুরে আসি, দেখে আসি নিজেদের কীরকম অবস্থা হবে। যদি স্বপ্নের মতো সবকিছুই পেয়ে যাই তাহলে তো ভালই। আর যদি দেখি বিপরীত কিছু, তবে দ্রুত বর্তমানে ফিরে এসে যেন সকল ভুল শুধরে নেই। এরকমটা যদি সত্যিই হতো! অবাক এ বিশ্ব। আসুন কিছু আলোচনা করা যাক টাইম ট্রাভেল নিয়ে-


- টাইম ট্রাভেল কী?

টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ আসলে সময়ের অক্ষ বরাবর ভ্রমণ। আমরা সকলেই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে অবগত,  দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব। তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। আজ পর্যন্ত এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। তবে ভবিষ্যতে হবে না এমনটা নয়। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে কালমাত্রিক সরণ বলা হয়। এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীতে ভ্রমণ, হতে পারে ভবিষ্যতে ভ্রমণ। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ নিয়ে একদমই বসে নেই।


আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত এবং লোভনীয় থিওরি হচ্ছে টাইম ট্রাভেলিং এবং টাইম ডিলেশন। আমরা সকলেই এ বিষয়ে জানি। আমরা সকলেই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে অবগত, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব। তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। আজ পর্যন্ত এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে কালমাত্রিক সরণ বলা হয়। এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীতে ভ্রমণ, হতে পারে ভবিষ্যতে ভ্রমণ।  বিজ্ঞানের ধারণা আলোর গতিতে বা তার চেয়ে বেশী গতিতে চলতে পারলেই টাইম ট্রাভেলিং সম্ভব। আবার নিউট্রিনো কণা যেহেতু যেকোন বস্তুর মধ্য দিয়েই অনায়েসে চলে যেতে পারে, সেহেতু সহজেই কোন ধরনের বাধা ব্যাতীতই চলা সম্ভব। কিন্তু এখানেও সমস্যার সম্মুখীন।


মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল-মা’আরিজ এর ৪ নং আয়াতে বলেনঃ

ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমান (তোমাদের হিসাব মতে) পঞ্চাশ হাজার বছর। অর্থাৎ ফেরেশতারা মহান রবের দরবারে এমন একটি দিনে উপস্থিত হয় বা হবে যেদিনের এক দিন সমান দুনিয়ার ৫০ হাজার বছরের সমান। জ্বি, ঠিক শুনেছেন। যে থিওরি পুরো পৃথিবীর বিজ্ঞান কে পরিবর্তন করে দিয়েছে। সেই থিওরি কিন্তু ১৪০০ বছর পূর্বেই মহান আল্লাহ তায়ালা তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে দিয়েছেন।


ফেরেশতারা নূরের বা আলোর তৈরী, তাদের জগৎও আলোর। সুতরাং বিজ্ঞানীদের টাইম ডিলেশনের সাথে পুরোপুরিই মিলে যাচ্ছে। টাইম ডিলেশনের আরো চমকপ্রদ কিছু নিয়ম রয়েছে। গতিশীল বস্তুর গতির আধিক্যতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সময়েরও পূর্বে কাজ হয়ে যায়। সহজভাবে বললে, মনে করুন একজন মানুষের চেয়ে মেশিন কাজ করার দিক দিয়ে বেশী গতিশীল। মানুষ যে কাজ ১০ ঘন্টায় করে মেশিন সেটা এক ঘন্টায় করে। অর্থাৎ গতিশীলতার কাছে কাজের সময় কমে যায়। এটাই বাস্তব।


- ইতিহাসে টাইম ট্রাভেল

১৮১৯ সালে ওয়াশিংটন আর্ভিংয়ের বিখ্যাত ‘রিপ ভ্যান উইংক্যাল’ বেশ সাড়া ফেলে দেয়। ডাচ বংশোদ্ভুত রিপ ভবঘুরে টাইপের ছিলেন। একদিন স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করতে করতে আর এই জগৎ সংসারের ঝামেলা থেকে ক্ষণিক রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের পোষা উলফ কুকুর নিয়ে পর্বতের দিকে রওনা দেন। সেখানে এক কাঠবিড়ালীকে অনুসরণ করে চলে যান পর্বতের একদম চূড়ায়। দেখা হয় দাঁড়িওয়ালা কিছু অদ্ভূত লোকদের সাথে। তাদের সাথে থাকা মদ খেয়ে কাবু হয়ে যান রিপ। ব্যস ঘুম থেকে উঠে দেখেন ২০ বছর গায়েব! টাইম ট্রাভেল নিয়ে তখন থেকেই জল্পনা কল্পনায় বেশ বেগ আসতে শুরু করে। আর মানুষ তারপর তেকেই টাইম ট্রাবেলের ধান্ধায় মেতে উঠে। মানুষ গভেষণা করে যাচ্ছে।

টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা?

প্রাচীন মহাকাব্য বা লোকগল্পে সময় ভ্রমণের অনেক কাহিনী প্রচলিত ছিল। টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত মহাভারতে রাজা কাকুদমির কাহিনীতে। যেখানে রাজা এবং তাঁর কন্যা রেবতীর সময়যাত্রার কাল্পনিক গল্প রয়েছে। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর জাপানের লোককথার এক চরিত্র উরাশিমাকো বা উরাশিমা তারোর সময় ভ্রমণের গল্পও বেশ জনপ্রিয়। তুলনামূলক আধুনিকতর অনেক গল্প উপন্যাসেরও কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে এই সময়ভ্রমণের ধারণা।আইরিশ লেখক স্যামুয়েল ম্যাদেনের ‘Memories of 20th century’ তে সময় ভ্রমণের কিছুটা ধারণা লাভ করা যায়। ১৭৭০ সালে ফরাসী লেখক ল্যুই সেবাস্তিয়ান মারসিয়ারের ‘’L’An 2440, rêve s’il en fut jamais’’ নামক উপন্যাসটি বেশ বিখ্যাত বনে যায় একটি কারণে, আর তা হলো এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তির সময়ভ্রমণ।চার্লস ডিকেন্সের A Christmas Carrol, ১৮৬১ সালে লেখা ফরাসী উদ্ভিদবিদ এবং ভূতত্ত্ববিদ পিয়ের বইটার্ডের ‘প্যারিস অ্যাভোঁ লেসোম্ব’ ইত্যাদি লেখায় সময়ভ্রমণের চমৎকার সংমিশ্রণ দেখতে পাই। এছাড়াও ‘নিউ মান্থলি ম্যাগাজিন’-এ প্রকাশিত স্বনামধন্য মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড হেলের ‘হ্যান্ডস অফ’ এ আমরা সময় ভ্রমণের উল্লেখ পাই।


- পদার্থবিদ্যায় টাইম ট্রাভেল এবং সম্ভাবনা

তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা বলে যে একটা কথা আছে, সেই অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল সম্ভব। কিন্তু এর মাধ্যমে শুধু অতীতে যাওয়া সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয় তা পরে ব্যাখ্যা করছি। কিন্তু হ্যাঁ, ভবিষ্যত ভ্রমণ সম্ভব। তবে সিনেমা বা সায়েন্স ফিকশনের নানা কমিকসের মতো গোল টাইম মেশিন বানিয়ে তা সম্ভব কিনা সে কথা জানা নেই। কিছুদিন আগে বিবিসিতে একটি খবর এসেছিল যে University of Connecticut-এর পদার্থবিদ্যার প্রফেসর রন ম্যালেট একটি ডিভাইস বানিয়েছেন যার আদলে ভবিষ্যতে টাইম মেশিন বানানো যাবে। 


বেশ আশার আলো দেখতে পাচ্ছি হয়তো! তবে তা কতদূর সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কিনা, কিংবা সম্ভব হলেও আমাদের জীবদ্দশায় হবে কিনা সেই ব্যাপারটি পুরোপুরিই অনিশ্চিত। অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত গণিতবিদ কুর্ট গডেল গণিতের মাধ্যমেই দেখিয়েছেন যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডে কিছু Closed Timelike Curve থাকা সম্ভব যা নির্দেশ করে সময়ভ্রমণও সম্ভব, তবে বিশেষ কিছু শর্তে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারেও সময় ভ্রমণ সম্ভব।


ধরুন, আপনাকে আলোর গতিতে ছুটে চলতে পারে এমন কোনো একটি মহাকাশযানে উঠিয়ে দেয়া হল এবং আপনি ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন মহাজগতের এপার থেকে ওপার। কিন্তু পৃথিবীতে এসে দেখবেন অনেক বছর সময় কেটে গেছে যেখানে আপনার কাছে মনে হবে মাত্র অল্প কিছু সময়। এভাবেই আইনস্টাইনের থিওরীতে সময় ভ্রমণের ফর্মুলা লুকিয়ে আছে।

টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা?


এখন আসি ব্ল্যাকহোলের ব্যাপারে। ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমে সময় ভ্রমণ কীভাবে সম্ভব? ব্ল্যাকহোল কী? ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর হলো তারার খুব দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা। তারাগুলো একেবারে চুপসে গিয়ে ভর একদম একটি বিন্দুতে এসে পৌঁছায়, যার ফলে স্থান কালের মাত্রা অসীম হয়ে যায়। সেখানে আলো প্রবেশ করলেও আর বের হয়ে আসতে পারে না। আবার আইনস্টাইনের Theory Of General Relativity অনুসারে ভর বেশি যতো, সময় ধীর হবে ততো।

আপনি যদি কোনো মহাকাশযান নিয়ে ব্ল্যাকহোলের আশপাশে ভ্রমণ করতে থাকেন আর অন্য একটি মহাকাশযান যদি পৃথিবীর চারদিকে ভ্রমণ করতে থাকে তবে ব্ল্যাকহোল ভ্রমণকারীর বয়স, পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা ব্যক্তির বয়সের অর্ধেক হবে।


প্রশ্ন করতে পারেন আমি কেন ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ঘোরার কথা বললাম। এর উত্তর হলো, ব্ল্যাকহোলে ঢুকলে আপনি আর বের হতে পারবেন না। সেখানে মহাকর্ষ বল অত্যধিক। আলোও বের হয়ে আসতে পারে না, যা আগেই বলেছি। ব্ল্যাকহোলের গ্রাভিটেশনাল ফিল্ডের শেষ সীমানাকে বলা হয় ঘটনা দিগন্ত, যা অতিক্রম করে ফেললে আপনাকে আর কোনোদিনও পাওয়া যাবে না। তাহলে ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ঘুরপাক খাবেন আর সময় স্থির হতে থাকবে, পৃথিবীতে তার দ্বিগুণের মত সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে। 


এবার ওয়ার্মহোলের ব্যাপারে কথা বলা যাক। বলা হয়ে থাকে এটিই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উপায়। আমাদের একটি বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন যে স্পেস বা মহাশূন্যের পথ কখনোই সমতল নয়। অর্থাৎ এটি বাঁকা পথে চলে। তাই আলো যখন মহাশূন্যের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করে, তখন এই বাঁকানো স্পেসের ভেতর দিয়ে একটি বাঁকানো পথে চলতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই বাঁকা পথের পাশাপাশি আরও একটি সংক্ষিপ্ত রাস্তাও আছে। এই সংক্ষিপ্ত পথই হচ্ছে ওয়ার্মহোল।


ওয়ার্মহোলকে অনেক সময় আইনস্টাইন-রজেন ব্রিজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। ধরুন, আমাদের সৌরজগৎ থেকে আলফা সেন্টরাইতে যাবেন, আলোর গতিতে গেলে লাগবে ৪.৩ বছর। আবার আপনি ভরযুক্ত, তাই আপনার পক্ষে আলোর গতিতে ভ্রমণ সম্ভব নয়। কিন্তু ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পথ তৈরি করে আপনি সহজেই আলফা সেন্টরাইতে প্রবেশ করতে পারবেন, আবার নিজের সৌরজগতেও ফিরে আসতে পারবেন। তার মানে আপনি ভবিষ্যতেও যেতে পারবেন আবার অতীতেও ফিরে আসতে পারবেন। তবে অতীতে ফিরে আসা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে পরে আলোচনা করছি।


স্টিফেন হকিং ওয়ার্মহোল প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসলে ব্ল্যাকহোলে পতিত কোনো বস্তু একেবারেই হারিয়ে যায় না, এটি কণিকারূপে ব্ল্যাকহোল থেকে নির্গত হয়। হকিং-বিকিরণ তত্ত্বানুযায়ী এই কণিকা যে পথে নির্গত হয়, সে পথটিই হলো ওয়ার্মহোল। অর্থাৎ ব্ল্যাকহোলে পড়লেই যে 


আপনি একদম হারিয়ে যাবেন, তা স্টিফেন হকিং মানতে নারাজ। তবে ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ত্ব প্রমাণ হলে আপনি কণিকারুপে সেই ওয়ার্মহোল থেকে বের হয়ে আসবেন।

আবার আরেকটু লক্ষ্য করুন, বিশাল ভরের কারণে ব্ল্যাকহোলের চারপাশের স্থান-কালের একটি অসীম বক্রতা সৃষ্টি হয়। লক্ষকোটি আলোকবর্ষ দূরবর্তী স্থান-কালগুলো বক্রতার কারণে একটি ক্ষুদ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। এখন আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কোনো বস্তুকে যদি ব্ল্যাকহোলে নিক্ষেপ করি, তাহলে এর কণিকাগুলো ওয়ার্মহোল দিয়ে নির্গত হয়ে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে লক্ষকোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনো জগতে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে যে স্থান-কালে পৌঁছতে ওই বস্তুর কোটি কোটি বছর লাগত তাকে আমরা ওয়ার্মহোল ব্যবহারে খুব কম সময়ে এ দূরত্বটুকু অতিক্রম করিয়ে অন্য জগতে প্রবেশ করাতে পারবো। তাহলে ওয়ার্মহোল সম্পর্কে আমরা প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি?


অনেকেই ভেবে থাকেন যে ওয়ার্মহোল হচ্ছে ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইটহোলের একটি মিলিত পথ। কিন্তু ওয়ার্মহোল আজও প্রমাণিত নয়, কারণ কোন ওয়ার্মহোল এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠিক আবার হোয়াইটহোলও প্রমাণিত নয় কারণ আজও এটি হাইপোথিসিসরূপেই আমাদের আশা দেখিয়ে আসছে। তবে ওয়ার্মহোলের ব্যাপারে একটি আশার ব্যাপার হচ্ছে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, কিপ থর্নের মতে ওয়ার্মহোল বাস্তবে পাওয়া সম্ভব, আর এটা দিয়েই টাইম ট্রাভেল সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হবে। দেখা যাচ্ছে আইনস্টাইন, হকিং, থর্ন সবাই একসাথে ওয়ার্মহোলের ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেছেন, অপেক্ষা শুধু কবে বাস্তবে সশরীরে দেখা দেবে এই ওয়ার্মহোল! অপরদিকে ফ্রাঙ্ক টিপলার তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেন যে, নিজের অক্ষের চারদিকে দ্রুত ঘূর্ণায়মান এক অসীম দৈর্ঘ্যের চোঙ আসলে একটি টাইম মেশিন। তাহলে অবশ্যই এর দ্বারা সময় ভ্রমণ সম্ভব। টিপলার অনুমান করেছিলেন যে, যথেষ্ট বেগে ঘূর্ণায়মান সসীম দৈর্ঘ্যের চোঙের সাহায্যেও সময় ভ্রমণের ধারণাটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে হকিং প্রমাণ করেন যে, কখনোই কোন সসীম দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা বিশিষ্ট টাইম মেশিন নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তার মানে টাইম মেশিন দিয়ে টাইম ট্রাভেল হকিং-এর মতে একদম অসম্ভব।


- কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে টাইম ট্রাভেল

স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বের মাধ্যমেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, টাইম ট্রাভেল প্রকৃতিবিরোধী। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বানু্যায়ী যে বিশেষ ক্ষেত্রসমূহ দ্বারা টাইম ট্রাভেল সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে, তা কোয়ান্টাম তত্ত্ব দ্বারা স্বীকৃত নয়। বেশ জটিল হয়ে গেল বিষয়টা। একবার বলা হচ্ছে সম্ভব, আরেকবার বলা হচ্ছে সম্ভব না। কারণ আবারও বলছি টাইম ট্রাভেল শুধু তাত্ত্বিকভাবেই সম্ভব, বাস্তবিক অর্থে আলোর গতিতে না পৌঁছাতে পারলে সম্ভব না। সেক্ষেত্রে এমন একটি টাইম মেশিন নির্মাণ করা প্রয়োজন যেখানে আলোর গতির কাছাকাছি গতি অর্জন করা সম্ভব।


যাই হোক মহাকর্ষের সামগ্রিক কোয়ান্টাম তত্ত্ব আজো আমাদের অজানা, তাই সময় ভ্রমণের সম্ভাবনাহীনতার ব্যাখ্যা বা অনুমান, কোনটিই আপাতত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত নয়। তাই বহু বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, টাইম ট্রাভেল বাস্তবে সম্ভব। এ প্রসঙ্গে পদার্থবিদ রোনাল্ড ম্যাল একটি বলয় লেসারের সাহায্যে ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলের অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে সময় ভ্রমণকে বাস্তবায়িত করার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।


বিভিন্ন সময়ে বহু বিজ্ঞানী(লিজুং ওয়াং, গুন্টার নিমস, অ্যালফন্স স্তালহফেন)- দাবী করে আসছেন যে তাঁরা আলোর চেয়ে বেশি গতিবেগে সংকেত প্রেরণের মাধ্যমে টাইম ট্রাভেলের ধারণাটি বাস্তবায়ন করেছেন, যদিও বাস্তবসম্মতভাবে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল এখনো সব বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কোয়ান্টাম তত্ত্বের আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে এটি মাল্টিভার্স বা মাল্টি ইউনিভার্স তত্ত্বকে সমর্থন করে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা সামনের পর্বে করবো।


- টাইম ট্রাভেল কি ও ইসলামী দৃষ্টিকোণে টাইম ট্রাভেলের প্রমাণ

ইসলামে টাইম ট্রাভেল এর অস্তিত্বঃ

ইসলামে টাইম ট্রাভেল এর অস্তিত্ব নিয়ে আমরা অনেকেই জানি না। যার ফলে আমরা অনেকেই মনে করি ইসলামে এ নিয়ে কিছুই উল্লেখ নেই।

এ নিয়ে আমাদের মহানবী (সাঃ) এর মেরাজ এর ঘটনা এবং ঘুমানো অবস্থায় আমদের রুহ এর নিয়ে যাবতীয় ঘটনা সম্পর্কে ধারনা থাকলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায়।


- শবে মেরাজ এর ঘটনাঃ

আমাদের মহানবী (সাঃ) শবে মেরাজের রাতে সাত আসমান অতিক্রম এর ঘটনা আমরা কম বেশি সবাই জানি। এই রাতে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করেন।


আমরা জানি যে মহাকাশ সীমাহীন। তবে এই সীমাহীন পথ মহানবী (সাঃ) অতিক্রম করেছেন খুবই অল্প সময়ে।কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? তার এই অসাধারণ ভাবনাতীত গতির মধ্যেই সব লুকিয়ে আছে।আমরা জানি, টাইম ধীরে না দ্রুত চলে তা নির্ভর করে গতি ও মহাকর্ষ এর উপর। অর্থাৎ, গতি কম হলে টাইম দ্রুত চলে আর গতি দ্রুত হলে টাইম ধীরে চলে।


মহানবী (সাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত কুদরতের দ্বারা অসাধারণ গতিতে যাওয়ায় টাইম প্রচণ্ড ধীরে চলে, যার কারণে তার কাছে যেটা অনেকদিন সেটা আমাদের কাছে এক রাত। অর্থাৎ এরকম গতিতে গেলে আমরাও টাইম ট্রাভেল করতে পারবো।এভাবেই শবে মেরাজের ঘটনা টাইম ট্রাভেলের অভিব্যক্তিকেই প্রকাশ করে।


-আমাদের রুহ কতৃক টাইম ট্রাভেলঃ

আমরা যখন ঘুমানে অবস্থায় থাকি তখন আমদের রুহ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে চলে যায়।আর এ সময় আমরা অনেকেই বিভিন্ন স্বপ্ন দেখি।

টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা?


অনেক সময় আমরা স্বপ্নে দেখি অতীতের কোনো কৃত কাজ বা ভবিষ্যৎ এর কিছু। এসবই আল্লাহ প্রদত্ত কুদরতের অংশবিশেষ। আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাঃ) বহু বার ভবিষ্যতের বিভিন্ন ঘটনা দেখে সাহাবীদের কাছে তা পেশ করতেন। এসব আমাদের কাছে অসম্ভব মনে হলে আল্লাহ এর কাছে কিছুই নয়।


পবিত্র কুরআনে আছে, 

‘ইন্নামা আমরুহু ইজা আরাদা শাইআন আই-ইয়াকুলা লাহু কুন ফাইয়াকুন’।(সূরা ইয়াসিন : ৮২)


অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) যখন কোন কিছু করতে চান , তখন তাকে শুধু বলে দেন ‘হও’ এবং হয়ে যায় ।


তাই এরকম স্বপ্ন দেখানো তার কাছে মোটেই অসম্ভব নয়।


এভাবেই তিনি স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ধারনা দেন। যা প্রমাণ করে যে ইসলামে টাইম ট্রাভেল এর অস্তিত্ব রয়েছে। পরিশেষে, এই পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা আল্লাহর সৃষ্টি নয়। টাইমও মহান আল্লাহর দ্বারাই সৃষ্ট। আল্লাহর হুকুমেই এই টাইম ট্রাভেল সম্ভব যা শবে মেরাজের ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে।


এছাড়াও মহানবী (সাঃ) কে আল্লাহ স্বয়ং নিজে স্বপ্নযোগে কিয়ামতের আলামত দেখিয়েছেন। আমাদের উচিত আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় নেয়ামতের শোকরগুজার করা ও তদনুযায়ী আমল করা।

No comments:

Post a Comment