টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা - ontechbd.com

Latest

Alive for Technology

Thursday, December 2, 2021

টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা

 টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব ? পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা ।

টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা


- টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব ?

উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। কিন্তু অতীতের দিকে টাইম ট্রাভেল সম্ভব কিনা তা কোয়ান্টাম গ্রাভিটি তত্ত্ব আবিষ্কারের পর বোঝা যাবে (বিজ্ঞান বর্তমান এটা নিয়ে কাজ করছে)। টাইম ট্রাভেল বলতে বুঝায় বর্তমান থেকে অতীত বা বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে পরিভ্রমণ করা ।


* এই লেখাতে আপনি জানতে পারবেনঃ

  • ১. টাইম ভবিষতের দিকে ট্রাভেল এবং অতীতের দিকে ট্রাভেল সম্পৰ্কে জানতে পারবেন।
  • ২. স্থানকাল মাত্রাটা কি?
  • ৩. ব্ল্যাক হোলের মাধ্যমে টাইম ট্র্যাভেল কিবনে ঘটে।
  • ৪. কিভাবে ক্ষুদ্র বিবরে টাইম ট্রাভেল হয় ?
  • ৫. আলোর বেগে কোনো নভোযানে ভ্রমণ টাইম ট্রাভেল ঘটে।
  • ৬. আদৌ টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব ?


আমরা সময় জিনিসটাকে অনেক সাধারন বিষয় মনে করি কিন্তু সময় এত সাধারণ বিষয় নয় । আমরা সবাই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা এই তিনটে মাত্রা সম্পর্কে জানি । কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করার জন্য আমাদেরকে এই তিনটি মাত্রা দিয়ে নির্ণয় করতে হয় । এই তিনটি মাত্রা ছাড়া আরো মাত্রা রয়েছে । চতুর্থ মাত্রাটি হলো স্থান-কাল । অর্থাৎ কোনো কিছুর অবস্থান নির্ণয় করার জন্য শুধু তিনটি মাত্রা দিয়ে নয় চারটে মাত্রা দিয়ে অবস্থান নির্ণয় করতে হবে । আম গাছের একটি ডালে আম রয়েছে । আজকে আমটি আছে কিন্তু আগামীকাল নাও থাকতে পারে । মূলত একারনেই কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করার জন্য আমাদেরকে সময় যোগ করে নিতে হবে । 


X অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তন করলে আপনি সামনে বা পিছনে যেতে পারবেন । ঠিক তেমনি ভাবে সময়ের অক্ষ বরাবর চললে অতীত বা ভবিষ্যতে যাওয়া যাবে । আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল  সম্ভব । প্রত্যেক দর্শকের কাছে সময়ের পরিমাপ ভিন্ন ভিন্ন । পর্যবেক্ষকের কাছে সময় নির্ভর করবে তার গতিবেগের উপর । যখন কোনো পর্যবেক্ষক আলোর বেগ এর কাছাকাছি চলে তখন তার সময় স্থির থাকা কোনো দর্শকের সাপেক্ষে স্লো হয়ে যায় । অর্থাৎ স্থির থাকা দর্শকের সাপেক্ষে গতিশীল ব্যক্তি টাইম ট্রাভেল করেছে বলা যায়। পর্যবেক্ষকের সময় নির্ভর করবে তার গতিবেগ এর উপর । 

টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা


কোন পর্যবেক্ষক যদি আলোর বেগে ভ্রমণ করে তাহলে ভবিষ্যতে চলে যাবে কিন্তু সেটার জন্য কিছু সমস্যা রয়েছে । আমি নাচলাম, উঠান বাঁকা না হলে ভালো হয় । নাচার কারণে উঠান বাঁকা হলে কেমন হবে ? 


সমস্যা হলো, আপনি কোনো নভোযানে চড়ে আলোর বেগের কাছাকাছি গেলে আপনার ভর বেড়ে m0 থেকে m হবে, ভর বৃদ্ধির সমীকরণটি হলো, ভর বৃদ্ধির সূত্র অনুযায়ী আলোর বেগের কাছাকাছি গেলে ভর বেড়ে যায় । শুধু যে আপনার ভর বৃদ্ধি পাবে তা নয় আপনার নভোযানের ভরও বৃদ্ধি পাবে । ভর বৃদ্ধি পাওয়া মানে E =mc2 সূত্র অনুযায়ী শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া । এখন নভোযান চালানোর জন্য জ্বালানি শক্তির প্রয়োজন । 


নভোযান আলোর বেগে চলতে হলে অসীম পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন কিন্তু আমরা অসীম পরিমাণ শক্তি সংগ্রহ করতে পারব না । তাই কোনো ভর বিশিষ্ঠ কণাকে অবিরাম ত্বরণ দিয়ে আলোর বেগের সমান করা যাবে না । মোট কথা কোনো কণা আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে যেতে পারবে না । কেউ কেউ দাবি করে ভবিষ্যতে হয়তো বিজ্ঞানীরা এমন কোনো যন্ত্র আবিস্কার করতে সক্ষম হবে, যা আলোর বেগের কাছাকাছি যেতে পারবে । আবার কেউ এই দাবির বিপক্ষে অবস্থান করে ।


- ব্ল্যাক হোলঃ

ব্ল্যাক হোল দিয়ে টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব?  ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ প্রভাবের কারণে সময় স্লো হয়ে যায় । আপনি একটি নভোযানে চড়ে ব্ল্যাক হোলের চারপাশে অবস্থান করলে পৃথিবীতে থাকা মানুষের সাপেক্ষে আপনার সময় স্লো হয়ে যাবে। মহাকর্ষ প্রভাবের উপর নির্ভর করবে আপনার সময় কেমন হবে । আমরা জানি , গ্রহের চারপাশে কৃত্রিম উপগ্রহের আবর্তন বেগ।


এই সমীকরণ থেকে দেখা যায় মহাকর্ষ বলের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন পর্যবেক্ষকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন সময় হবে। পৃথিবীর সবার কাছে সময়ের পরিমাপন একই । কারণ পৃথিবীতে অবস্থানরত সবার অভিকর্ষ ত্বরণ একই । কিন্তু যারা পাহাড়ের উপরে অবস্থান করে তাদের সময় এবং পাহাড়ের নীচের মানুষের কাছে সময়ের পরিমাপ ভিন্ন । 1962 সালে এটা প্রমান করা হয় ।  উপরের সমীকরণের মাধ্যমে দেখা যায় আপনি ব্ল্যাক হোলের চারপাশে আবর্তন করলে আপনার সময় স্লো হবে । 


আলোর বেগের সমান বেগে কোনো নভোযানে চড়ে যেখানে গেলে সময় লাগবে এক হাজার বছর, গড়ে 60-70 বছর বেঁচে থাকা মানুষের কাছে এটা অসম্ভব ।কোনো উপায় ব্ল্যাক হোলে গেলেন এবং ব্ল্যাক হোলে লাফ দিলেন তখন আপনি মহাকর্ষের আকর্ষণে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন । (পরবর্তীতে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে লেখবো ইনশাআল্লাহ্ , আমাদের সাথে থাকুন )


- ক্ষুদ্র বিবরঃ

টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা


ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? ব্ল্যাক হোলে লাফ দিলে তার মৃত্যু অনিবার্য । স্টিফেন হকিং এর এই ব্যাপারে আপত্তি ছিলো, তিনি মনে করতেন তথ্য সম্পূর্ণ হারিয়ে যায় না সেটা হোয়াইট হোল দিয়ে বের হয় । হোয়াইট হোল হলো ব্ল্যাক হোলের উল্টো । ব্ল্যাক হোলের ভিতর দিয়ে যা প্রবেশ করে সেটা হোয়াইট  হোল দিয়ে বের হয়ে যায় । হোয়াইট হোল আর ব্ল্যাক হোলের মধ্যে  সংযোগ রাস্তা হলো ক্ষুদ্র বিবর । ক্ষুদ্র বিবর  ব্ল্যাক হোল এবং হোয়াইট হোলের মধ্যে যেমন সংযোগ তৈরি করে ঠিক তেমনি ভাবে এক মহাবিশ্ব থেকে অন্য মহাবিশ্বের বা শিশু  মহাবিশ্বের মধ্যে সংযোগ রাস্তা হলো ক্ষুদ্র বিবর । ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে অনেক সহজে টাইম ট্রাভেল করা যায় । এটা দিয়ে ভবিষ্যত ও অতীতে যাওয়া যায় ।


আকাশে যে তারা দেখেন বর্তমান সেটা কিন্তু বর্তমানের তারা নয় । এটা হলো অতীতের তারা । আমাদের আকাশে যে তারা দেখা যায় এগুলো সব অতীতের তারা । আমাদের সবচেয়ে নিকটতম তারা হলো  প্রক্সিমা সেন্টাউরি 4.2 আলোকবর্ষ । অর্থাৎ সবচেয়ে নিকটতম তারা থেকে আলো আসতে সময় লাগে 4.2 বছর, এই তারা 4.2 বছর অতীতের তারা । আকাশের সব তারাই অতীতের । হয়তো এমন কোনো তারা আছে যার জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছে, সেখানে তারা নেই । কিন্তু আমরা মনে করি তারাটি এখনো জ্বলছে ! মনে করুন আপনি  প্রক্সিমা সেন্টাউরিতে বসবাস করেন । আপনার তারার জ্বালানি শেষ হবে ঠিক সেই মুহুর্তের আগে আপনি ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে পৃথিবীতে চলে আসলেন । ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে দেখেছিলেন আপনার তারার মৃত্যু হয়ে গিয়েছে কিন্তু আপনি পৃথিবীতে আসার পর আপনি দেখবেন তারাটি এখনো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে । 


আপনি 4.2 বছর তারাটি জ্বলতে দেখবেন , আপনি পৃথিবীতে বসে 4.2 বছর নিজের অতীত দেখতে পারবেন । ক্ষুদ্র বিবর থিওরিক্যাল , এখনো প্রমান হয়নি ,ভবিষতে প্রমাণ হতেও পারে । তবে এতো খুশি হবার কিছু নেই । কারণ ক্ষুদ্র বিবর লজ্জাবতী  ফুলের পাতার মতো । স্পর্শ করা মাত্র লজ্জাবতী পাতা চুপসে যায় ঠিক তেমনি ক্ষুদ্র বিবর খুবই ভঙ্গুর প্রকৃতির । আপনি ক্ষুদ্র বিবরে ঢুকলে শব্দ পেলে ভেঙে যাবে ।  কিন্তু এমন কোনো নভোযান নেই সেটার শব্দ হবে না । 


আপনি 4.2 বছর নিজের অতীত দেখলেন । তাহলে কি অতীতে যাওয়া সম্ভব ? তখন এর উত্তরে চলে আসে গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স সহ নানান রকমের প্যারাডক্স , আর সে প্যারাডক্সের থেকে দেখা যায় যে টাইম ট্র্যাভেল করার পর আপনি আপনার নিজের অস্বিত্ব নষ্ট করে ফেলেন । প্যারাডক্স গুলো ভয়ানক এখন থেকে পড়ুন । এই সব প্যারাডক্স অনুযায়ী নিঃসন্দেহ বলা যেতে পারে অতীতে টাইম ট্র্যাভেল অসম্ভব ।


- অতীতের দিকে টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব ?

কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মতামত অতীতের দিকে টাইম ট্রাভেলের পক্ষে, তাদের মতে অতীতে গিয়ে কোনো রকম পরিবর্তন করতে পারবে না । শুধুমাত্র দর্শকের মতো দেখতে হবে , অনেকটা ভিডিও করা দৃশ্যের মতো । এই যুক্তির সাথে আমিও এক মত । উপরের প‍্যারা থেকে বোঝা যায় যে ,প্রক্সিমা সেন্টাউরি থেকে আপনি যে কোনো উপায় আলোর আগে আসতে পারলে তো সেটা অতীত দেখতে পারছেন কিন্তু কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়া । 


তবে বেশির ভাগ বিজ্ঞানী মনে করেন যে টাইম ট্রাভেল করে প্যারালাল মহাবিশ্বে চলে যায় । আর প্যারালাল মহাবিশ্বে আপনার মতো কোনো হুবহু আপনি রয়েছেন যা আপনার টুইন , সেখানে আপনি আপনার টুইনের দাদাকে খুন করলে আপনার অস্তিত্ব টিকে থাকে । তখন টাইম ট্র্যাভেল প্যারাডক্স কোনো রকম সমস্যা হয় না ।





No comments:

Post a Comment